কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলি

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং - কেন্দ্রীয় ব্যাংক | NCTB BOOK

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার নিয়ন্ত্রক হিসেবে সরকার, জনগণ ও অন্যান্য ব্যাংক এবং সর্বোপরি দেশের উন্নয়নে কাজ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক কার্যাবলিকে আমরা চার ভাগে ভাগ করতে পারি।

 

ক)সাধারণ কার্যাবলি :

১) নোট ও মুদ্রা প্রচলন : দেশের নোট ও মুদ্রা প্রচলনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত একমাত্র প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংক |

২) মুদ্রাবাজারের অভিভাবক : কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাবাজারের অভিভাবক (Guardian of The Money Market) এবং মুদ্রার পূর্ণ নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে থাকে ।

৩) সহজ বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি : কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা বিল, হুন্ডি ইত্যাদির মাধ্যমে সহজ বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি (Creation of Easy Medium of Exchange) করে থাকে।

৪) ঋণ নিয়ন্ত্রণ : ব্যাংক হার নীতি, খোলাবাজার নীতি, জমার হার পরিবর্তন, নৈতিক প্ররোচনা ইত্যাদি পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ঋণ নিয়ন্ত্রণ (Credit Control) করে।

৫) মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ : বাজারের অর্থ সরবরাহের হ্রাস-বৃদ্ধি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার মান তথা ক্রয় ক্ষমতা সংরক্ষণ করে থাকে।

৬) বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ : কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার বৈদেশিক মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, দেশীয় মুদ্রার সম্মানজনক বিনিময় হার সৃষ্টি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

৭) মূল্যস্তর স্থিতিশীল রাখা: যেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, ফলে মূল্যস্তরকে স্থিতিশীল রাখা (Maintaining Stability in Price) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেকটি অন্যতম কাজ।

৮) বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল সংরক্ষণ : একটি দেশের মুদ্রার বিনিময় হার নির্ভর করে সেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল সংরক্ষণ (Maintaining Foreign Exchange Reserve) করে থাকে।

৯) ব্যাংক ব্যবস্থার উন্নয়ন : কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংকব্যবস্থার সেবা ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে।

১০) কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি : নতুন নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও নতুন শাখা খোলার অনুমতি প্রদান করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি (Creating Employment) করে ।

১১) সরকার কর্তৃক গৃহীত ঋণের তদারক : কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি ঋণের তদারক করে এর যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করে।

 

খ) সরকারের ব্যাংক হিসেবে সম্পাদিত কার্যাবলি

১) ঋণের উৎস: সরকার আর্থিক সংকটের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট হতে ঋণ গ্রহণ করে থাকে, তাই এটি সরকারের ঋণের উৎস (Source of Credit) হিসাবে কাজ করে।

২) তহবিল সংরক্ষণ : কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের অর্থ ও অন্যান্য সম্পদের তহবিল সংরক্ষণ (Maintaining Government Fund) করে থাকে।

৩) হিসাব সংরক্ষণ : সরকারের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ (Maintaining Govt. Account) করে থাকে।

৪) লেনদেন সম্পাদন : কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের পক্ষে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লেনদেন সম্পাদন ( Handle Govt. Transactions) করে থাকে।

৫) বৈদেশিক মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয় : দেশের পক্ষে বৈদেশিক মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয় (Purchase & Sale of Foreign Currency) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি উল্লেখযোগ্য কাজ।

৬) উপদেষ্টা : কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরবরাহের। অর্থনৈতিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নে ও বাস্তবায়নের উপদেষ্টা (Advisor) হিসেবে কাজ করে থাকে।

৭) তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ : বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়ক যাবতীয় তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ (Coordination & Maintainance of Different Statistics) করে থাকে।

৮) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী : কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিদেশি ব্যাংক এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থার সাথে সরকারের সম্পর্ক স্থাপন করে এবং সাধন করে।

৯) সরকারের প্রতিনিধিত্ব : কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।

 

গ) সকল ব্যাংকের ব্যাংকার হিসাবে সম্পাদিত কার্যাবলি

১) অনুমতিদান ও তালিকাভুক্তকরণ : কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি ও তালিকাভুক্তির কাজ করে থাকে।

২) কার্যরত ব্যাংকের নতুন শাখা : বাণিজ্যিক ও অন্যান্য ব্যাংকের নতুন শাখার ( New Branch) অনুমোদন কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রদান করে থাকে।

৩) নিকাশ ঘর : একমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংকই এক ব্যাংকের সাথে অন্য ব্যাংকের লেনদেন নিষ্পত্তি করে নিকাশ ঘরের (Clearing House) মাধ্যমে।

৪) ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল : ব্যাংকগুলো আর্থিক সংকটের সময় যখন কোনো উৎস হতে তহবিল সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না, সে সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকসমূহকে ঋণ দিয়ে থাকে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল (Lender of the Last Resort) বলা হয়।

৫) বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ : কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুসংগঠিত নিয়মনীতি দ্বারা বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ (Controlling the Function of Commercial Banks) করে।

৬) হিসাবপত্র পরীক্ষা : কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের হিসাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে সঠিক হিসাব সংরক্ষণে বাধ্য রাখে।

৭) উপদেষ্টা ও পরামর্শদাতা : কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন বিষয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে উপদেশ ও পরামর্শ দিয়ে থাকে।

৮) বাধ্যতামূলক তহবিল সংরক্ষণ : আমানতকারীর স্বার্থ সংরক্ষণে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ মোট আমানতের একটা অংশ বাধ্যতামূলকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ হিসেবে জমা রাখতে হয়।

৯) অন্যান্য ব্যাংকের প্রতিনিধি : কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য সদস্য ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে।

১০) ঋণ আদায় : বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রদত্ত ঋণ আদায় ( Recovery of Loan) কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকে।

১১) বৈদেশিক বাণিজ্যি উন্নয়ন : কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়নে (Developing Foreign Trade) বাণিজ্যিক ব্যাংককে সহায়তা করে থাকে।

 

ঘ. অন্যান্য কার্যাবলি

১) কৃষি উন্নয়ন : দেশ কৃষি খাতে উন্নয়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে কৃষি ব্যাংক স্থাপন বা কৃষি ঋণ কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে।

২) শিল্প উন্নয়ন : শিল্প বিনিয়োগ উৎসাহমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে নীতি নির্ধারণসহ ঋণ সহযোগিতা করে থাকে।

৩) সমবায় ব্যাংকের উন্নয়ন : কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমবায়ের উন্নয়নে ঋণ-সুবিধাসহ নানাবিধ কার্যক্রমের মাধ্যমে সহায়তা করে থাকে।

৪) গবেষণা কার্যক্রম : শিল্প-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধনের উপায় উদ্ভাবন, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গবেষণা কার্যক্রম (Research Work) পরিচালনা করে থাকে।

৫) ঋণের ব্যবহার নিশ্চিতকরণ : বাজারে প্রদত্ত ঋণের যথাযোগ্য উৎপাদনশীল ব্যবহার নিশ্চিত করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

Content added || updated By
Promotion